December 22, 2024, 12:39 pm
এস.এম.শামীম রানা/শেখ মেহরাব হাসান মুশফিক/
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন কুষ্টিয়ায় ভিসা সেন্টার নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। অনেকদিন ধরেই এই অঞ্চলের মানুষ এই দাবি জানিয়ে আসছে। বিষয়টি আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে চাই।
তিনি বলেন এ ধরনের সেন্টার বসানোর কিছু পূর্বশর্ত থাকে। এটি একই সাথে ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। তিনি মনে করেন কুষ্টিয়া অঞ্চল দ্রুত উন্নয়ন বর্ধনশীল একটি এলাকা। এই অঞ্চলের সাথে ভারতের দীর্ঘদিনের একটি সুষম ও মসৃণ সর্ম্পক রয়েছে ; রয়েছে ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সর্ম্পকের একটি বড় অংশীদারিত্ব। তাই এই অঞ্চলকে ঘিরে এ ধরনের চিন্তা খুবই ইতিবাচকভাবে বিচেনায় আনা যেতে পারে।
তিনি বলেন এ বিষয়ে সকল সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া দিশা টাওয়ারে আয়োজিত কুষ্টিয়া রোটারী ক্লাব আয়োজিত লাইফ সাপোর্ট এ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
তিনি বলেন তৎকালিন নদীয়া জেলার অন্তর্গত বর্তমান বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলাসহ আশপাশ এলাকার মানুষের সাথে ভারতীয় সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার জন্য, কুষ্টিয়াতে ভিসা সেন্টার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কোভিড কালীন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সকল উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
মি: বিক্রম আরো বলেন, একজন ভালো ডাক্তারই জানেন বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে রোগীর জীবন বাঁচাতে লাইফ সাপোর্ট প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একটি দেশের মানুষের উন্নয়নে সরকার সব রকম ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে না। সহযোগী উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবীর সংগঠনগুলোকেও সামনে এগিয়ে আসতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল মানবিক সংগঠন রোটারী সেই কাজটিই করে চলেছে। ভারতীয় জনগনের পক্ষ থেকে কোভিড কালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ১০৯ টি এম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে কুষ্টিয়া বাসীল জন্য দেওয়া হলো ৩ টি।
তিনি বলেন অনেক অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে দুদেশের। রপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোলকাতার খুব নিকট দুরত্বে। কুষ্টিয়াকে কেন্দ্র কওে উভয় দেশের মধ্যে বানিজ্যের প্রসার ঘটতে পারে যেমন আর্ন্তজাতিক মানের ট্যুরিস্ট লজ। এসব হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হবে।
কুষ্টিয়াতে মেডিকেল কলেজ ও ভারতীয় হাসপাতাল গুলো চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে পাওে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সহযোগীতা করেছে। এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত থাকবে যুগ যুগ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ভারত বাংলাদেশের জনগনের পাশে ছিলো গত ৫০ বছর। আগামী দিন গুলোতেও থাকবে।
বিশিষ্টি ব্যবসায়ী রোটারিয়ান অজয় সরেকা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
কুষ্টিয়া রোটারী ক্লাব এর সভাপতি কামরুজ্জামান নাসির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি।
বিশেস অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য আককম সরোয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ , কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি ডা: এসএম মুসতানজিদ, সম্মিলিত সামাজিক জোট কুষ্টিয়ার চেয়ারম্যান বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ্যাড. সুধীর কুমার শর্মা, রোটারিয়ান রাব্বি, কুষ্টিয়া রোটারী ক্লাব এর সদ্য সাবেক সভাপতি সামসুন্নাহার আলো।
বিশেষ অতিথি কুষ্টিয়া মাটি ও মাসুষের উন্নয়নের কর্ণধার মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময় থেকে শুধু নয়। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক প্রাগৈতিহাসিক কালের। হাজার বছরের অতীথ থেকেই দুদেশের মধ্যে সংস্কৃতি, চিন্তা, আচার=অচরণে অভিন্ন সর্ম্পক বিদ্যমান। এরপর আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছে ভারত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বিশ্ববাসীর সমর্থন আদায় নিরন্ন বাঙালীর খাদ্য ও থাকার আশ্রয় দিয়েছেন মহামতি ইন্দিরা গান্ধী, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জি। এরই ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা সরকার।
তিনি বলেন ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক সম্পর্ক যা কখনও ছিন্ন হবার না। দুদেশের বর্তমান ৫০ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো অনন্য উচ্চতায় পৌছাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মাহবুব উলআলম হানিফ আরো বলেন বলেন দু:সময়ে যারা পাশে থাকেন তারাই প্রকৃত বন্ধু, কোভিড কালিন যখন বিশ্ব বিপর্যস্ত ঠিক সেই সময়ও ১০৯ টি এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে ভারত বাংলাদেশের দু:সময়ে পাশে থেকে প্রমান করেছে এ সম্পর্ক ছিন্ন হবার নয়। এ বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চেয়ে কম নয়।
আকম সরোয়ার জাহান বাদশা, বলেন, কুষ্টিয়া আগে নদীয় মহকুমার অন্তর্গত ছিলো সে কারনে আমাদের সাথে অনেক মিল আছে। ভারত যেতে ভিসা করতে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়, যশোর ও রাজশাহী কুষ্টিয়া থেকে অনেক দূরে সে কারনে কুষ্টিয়াতে ভারতীয় ভিসা সেন্টার স্থাপন করা খুব জরুরী। কিনি বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করার আহবান জানান।
ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন ভারতের আমরা বাংলাদেশের জনগন ও সরকার সব সময় কৃতজ্ঞ যে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদের পাশে ছিলো । ভারত বাংলাদেশ বন্ধুত্ব এগিয়ে যাচ্ছে যাবে বলেও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ভারত দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে সহযোগীতার যে বিতৃত দিগন্ত উন্মুক্ত করেছেন তা যুগ যুগ ধওে অব্যাহত থাকবে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন ভারতের জনগনের দেওয়া এই লাইফ সাপোর্ট এ্যাম্বুলেন্স কুষ্টিয়া মানুষের অনেক উপকারে আসবে। লাইফ সাপোর্ট এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করায় তিনি ভারত সরকার ও জনগনকে ধন্যবাদ দেন। তিনি সকল সহযোগীতা সম্প্রসারনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান ভলেন ভারত সরকার সব সময়ই বাংলাদের অকৃত্রিম বন্ধু। ভারত ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সহযোযোগীতা করেছিল। ভারত সময় বাংলাদেশের পাশে ছিলো আগামীতে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি ডা: এসএম মুসতানজিদ, আমরা ভারতে গেলে ভুলে যায় আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি, ভারতে জনগণ সব সময় ভাই বন্ধু হিসেবে গ্রহন করে থাকে। তিনি দুদেশের মধ্যে চিকিৎসা সহায়তা বিনিময়ের উপর জোর দেন।
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান ভারতে তার দীর্ঘদিনের লেখাপড়াকারীণ অবস্থান ও যাতায়াতের সময় ঘটা বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে কুষ্টিয়ায় একটি ভিসা সেন্টার নিমার্ণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন প্রতিবছর অঞ্চলের দুটি স্থলবন্দও হয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ভারতে গমন করেন। কয়েক কোটি মানুষকে নিয়ে একটি ভিসা সেন্টার স্থাপন এখন সময়ের দাবি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ্যাড. সুধীর কুমার শর্মা, ভারত ও ভারতে জনগন সব সময় আমাদের সাথে বন্ধুর মত আচরন করে। তারা আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু কৃষ্টি কালচার সব দিক থেকে।
কুষ্টিয়া রোটারী ক্লাব এর সদ্য সাবেক সভাপতি সামসুন্নাহার আলো রোটারী ক্লাবকে লাইফ সাপোর্ট এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা প্রধান অতিথিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন এতে রোটারী ক্লাব কুষ্টিয়া কার্যক্রম আরো ত্বতারিন্তি হবে।
রোটারিয়ান অজয় সরেকা বলেন ভারতের ভিসা সেন্টার কুষ্টিয়া হলে আমরা সহ আশপাশের মানুষ উপকৃত হবে। ভারত যাওয়ার সময় বিএসএফের হরয়ানী বন্ধে তিনি প্রধান অতিথির কাছে জোর দাবি করেন ও রোটারী ক্লাব এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতি কামরুজ্জামান নাসির বলেন রোটারী ক্লাব সব সময় কুষ্টিয়ার মানুষের জন্য কাজ করছে আগামীতেও করবে। ভারত সরকারে উপহার রোটারীর কার্যক্রমে কে আরো ত্বরান্বিত করবেও তিনি জানান।
Leave a Reply